• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:২৪ পূর্বাহ্ন |
  • Bangla Version
নিউজ হেডলাইন :
করোনা শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের বেশি, মৃত্যু ১ সুষ্ঠ ভোটে ডিজিটাল পদ্ধতি দরকার  অভয়নগরে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বাস্তবায়ন ও মনিটরিং সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ অভয়নগরে সরকারীভাবে ধান চাল সংগ্রহের উদ্বোধন অভয়নগরে মেধা অন্বেষন ও কুইজ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত অভয়নগরে দুদক কর্তৃক সততা স্টোরের অর্থ ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ আশুলিয়া টু চান্দুরা চৌরাস্তা যানজটের দুর্ভোগ,,,  অভয়নগরে মাধ্যমিক পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধানকে সংবর্ধনা যশোর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)অভিযান চালিয়ে ৪ বোতল বিদেশী মদ উদ্ধার সহ আটক -১ অভয়নগরে পায়রাহাট ইউনাইটেড কলেজ শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি অর্জনে আনন্দ শোভাযাত্রা নড়াইলের ইউপি চেয়ারম্যান  মোস্তফা কামাল’কে গুলি করে হত্যাকান্ডের ঘটনায় আটক -৪ সুষ্ঠ ভোটে ডিজিটাল পদ্ধতি দরকার আশুলিয়ায় ২৪ ঘণ্টায় ছয় জনের মরদেহ উদ্ধার ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যা বললেন মামুনুল হক যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ খেলা হচ্ছে না তাসকিনের, বিকল্প ভাবনায় হাসান দুই সিনেমা নিয়ে ফিরছেন আফরান নিশো

লাটে উঠেছে আয়, কমেছে রোগী

বিশেষ প্রতিনিধি অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতিতে লাটে উঠেছে চট্টগ্রামের জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালের আয়। পাশাপাশি সেবার মান সন্তোষজনক না হওয়ায় কমেছে রোগী। ছয় বছরের ব্যবধানে এই হাসপাতালের আয় কমেছে ১৬ শতাংশ। আর পাঁচ বছরে রোগী ভর্তি কমেছে ৭ শতাংশ। হাসপাতালটির অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় উঠে এসেছে এই তথ্য।একসময়ের লাভজনক জেমিসন হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেড় বছর ধরে সময়মতো বেতন পাচ্ছেন না; এখনও বকেয়া চার মাসের বেতন। হাসপাতাল পরিচালনা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক বছর হাসপাতালের আয় কম হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসপাতালে গত ১০ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাবে স্বচ্ছতা নেই। প্রতিদিনের আয় প্রতিদিন ব্যাংকে জমা রাখার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। ক্যাশ থেকে নগদে খরচ করা হতো। আয়-ব্যয়ের হিসাবসহ বিভিন্ন কাজের জন্য হাসপাতালে একটি সফটওয়্যার থাকলেও তা ব্যবহারে ছিল অনীহা। সুনির্দিষ্ট কারণ দেখানো ছাড়াই রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের ৩০ লাখ টাকার এফডিআর ভেঙে তোলা হয়েছে টাকা। সব মিলিয়ে ছিল চরম অব্যবস্থাপনা। আর এই অব্যবস্থাপনার কারণে কমতে থাকে আয়। ডাক্তার-কর্মকর্তা-কর্মচারীর আট মাসের বেতন বকেয়া পড়ে। তবে চলতি বছরের শুরুতে নতুন পরিচালনা কমিটি দায়িত্ব নিয়ে ওই বকেয়া চার মাস কমিয়ে আনে।জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি হলো চট্টগ্রাম জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একটি প্রতিষ্ঠান। জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান পদাধিকারবলে এই হাসপাতালের সবকিছু দেখাশোনা করেন। তবে ২০০৯ সাল থেকে গত ২ জানুয়ারি পর্যন্ত হাসপাতালটির সবকিছু তদারকি করেন সোসাইটির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. শেখ শফিউল আজম। সোসাইটির নতুন কমিটি দায়িত্ব নেয় গত ৩ জানুয়ারি। ওই দিন থেকে জেমিসন হাসপাতাল তদারকির দায়িত্বেও পরিবর্তন আসে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন কমিটি হাসপাতালের অনিয়ম তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। এ লক্ষ্যে গঠন করা হয় ‘অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটি’। কমিটির প্রধান করা হয় হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আশরাফদৌল্লা সুজনকে। এ ছাড়া কমিটিতে ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের এক কর্মকর্তা (পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক)। ওই কমিটি গত ৯ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যানের কাছে নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালের ক্যাশবুকে আয়ের বিবরণ রাখা হলেও খরচের বিবরণ নেই। ২০১৬ সালের ক্যাশবুক, ব্যাংকবুক ও লেজার এবং খরচের ভাউচারে রয়েছে বড় গরমিল। খরচের বিবরণীতে (হেড) একই কায়দায় একই তারিখে একই প্রতিষ্ঠানকে আলাদাভাবে বিল পরিশোধ দেখানো হয়েছে। প্রকিউরমেন্ট রুলস অনুসরণ করা হয়নি। তা ছাড়া প্রকৃত বাজারদর থেকে অস্বাভাবিক বেশি দামে হাসপাতালের মালপত্র কেনা হয়েছে। খরচের বিলগুলো কাটাছেঁড়া এবং ওভাররাইটিং করা। আর হাতে লেখা বিলের সংখ্যাই বেশি।যুব রেড ক্রিসেন্ট ক্যাম্পেও হয়েছে নয়ছয়। ২০১৯ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ যুব রেড ক্রিসেন্ট ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী ছিলেন দেড় হাজার এবং খরচ হয় ৯৩ লাখ টাকা। আর গত মার্চে অনুষ্ঠিত সপ্তম যুব রেড ক্রিসেন্ট বিভাগীয় ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী ছিলেন আড়াই হাজার এবং খরচ হয় ৪১ লাখ টাকা। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বলছে, ষষ্ঠ যুব রেড ক্রিসেন্ট ক্যাম্পের ব্যয় অতিরিক্ত এবং অস্বাভাবিক।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, গত এক যুগে আয় হয়েছে ১০৪ কোটি ৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২০১৭ সালে আয় হয় ১০ কোটি ২২ লাখ ১১ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে আয় কমে ৬ শতাংশ (৯ কোটি ৬১ লাখ ৫৫ হাজার), ২০১৯ সালে কমে ১৩ শতাংশ (৮ কোটি ৯৮ লাখ ১৪ হাজার), ২০২০ সালে কমে ২১ শতাংশ (৭ কোটি ৭৭ লাখ ৩৯ হাজার), ২০২১ সালে কমে ২০ শতাংশ (৮ কোটি ১৫ লাখ ৮২ হাজার) এবং ২০২২ সালে কমে ১৬ শতাংশ আয় (৮ কোটি ৬৭ লাখ ১৬ হাজার)। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে আয় কমেছে ১৬ শতাংশ। আর ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত আয় হয়েছে ৫ কোটি ১৪ লাখ ২২ হাজার টাকা।আয় কমার পাশাপাশি হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও কমেছে। ২০১৮ সালে রোগী ভর্তি হয় ৮ হাজার ৫০৬ জন। ২০১৯ সালে তা কমে হয় ৮ হাজার ১৩৩ জন। ২০২০ সালে রোগী আরও কমে; এ বছর রোগী ছিল ৭ হাজার ৪৩৪ জন। তবে ২০২১ সালে রোগী কিছুটা বাড়ে, ৯ হজার ১৬ জন। কিন্তু ঊর্ধ্বমুখী ওই ধারা ২০২২ সালে রক্ষা হয়নি, ওই বছর রোগী ভর্তি হয় ৭ হাজার ৯০৮ জন। এই হিসাবে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২২ সালে রোগী কমে ৭ শতাংশ। চট্টগ্রাম রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম মনে করেন, হাসপাতালের আয় ও রোগী কমার মূল কারণ অব্যবস্থাপনা। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘দারোয়ানদের ডিউটিতে পাওয়া যেত না। হাসপাতালের ভেতরে ছিল ময়লার স্তূপ। প্রবেশমুখে সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিন, ময়লার দুর্গন্ধ। চারপাশের ড্রেন ছিল অপরিষ্কার। এই পরিবেশ রোগীবান্ধব নয়।’ তা ছাড়া নির্ধারিত সময়ে ডাক্তাররা উপস্থিত থাকতেন না বলে উল্লেখ করেন তিনি।চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম জানান, এখন বায়োমেট্রিক হাজিরার মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করা হচ্ছে। অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা বন্ধ হয়েছে। তাই হাসপাতালে রোগী বাড়ছে। চলতি বছরের ছয় মাসে ভর্তি রোগী ছিল ৫ হাজার ৯১ জন।নিরীক্ষা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে সোসাইটির সেক্রেটারি আসলাম খান বলেন, ‘হাসপাতালের ট্রান্সফরমার বিকল হলে বিনামূল্যে নতুন ট্রান্সফরমার সরবরাহ করে পিডিবি। অথচ এই বাবদ বিল দেখিয়ে হাসপাতালের ফান্ড থেকে ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে।’

ফার্মেসিকে বিশেষ সুবিধা

হাসপাতালের ভেতর ২০১১ সালে ২১২ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয় ‘মাদারস কেয়ার ফার্মেসি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বলছে, প্রকৃতপক্ষে ওই ফর্মেসি ব্যবহার করছে হাসপাতালের ৩৪৯ বর্গফুট এবং কমন স্পেসের ৪৪২ বর্গফুট জায়গা। তা ছাড়া ২০১২ সাল থেকে তারা হাসপাতালের ২৪১ বর্গফুট একটি টিনশেড গোডাউন বিনা ভাড়ায় ব্যবহার করছে। এসবের ভাড়া দাঁড়ায় ৩০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। শুধু তাই নয়, চুক্তি অনুযায়ী ‘অগ্রিম’ হিসেবে মাদারস কেয়ার ফার্মেসির দেওয়া সাড়ে ছয় লাখ টাকা ছিল অফেরতযোগ্য। কিন্তু পরে সেই টাকা ফার্মেসি মালিককে ফেরত দেওয়া হয়েছে।তবে জেমিসন হাসপাতালের কাছে সুবিধা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন মাদারস কেয়ার ফার্মেসির মালিক রাজীব মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘এখানে বোঝার ভুল হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করব।’

জেলা পরিষদের অনুদান

জেমিসন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ১৯৭ কর্মীর বেতন, প্যাথলজি খরচ, মেডিকেল সামগ্রী ক্রয়সহ বিভিন্ন খাতে মাসে কোটি টাকার মতো লাগছে। কিন্তু আয় হচ্ছে এর কম। এমন অবস্থায় হাসপাতালটির উন্নয়নে জেলা পরিষদ থেকে ৪৪ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ওটি ও লেবার রুমের যন্ত্রপাতি মেরামত, কেবিন মেরামত, জেনারেটরে ওভারহোলিং, বেড মেরামত, বেবি কট ও বেড সাইড লকার মেরামত, বেডশিট ও পর্দা ক্রয় ইত্যাদি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.